শশীলজ, ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ী, যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ী নামেও সমধিক খ্যাত। শহরের কেন্দ্রস্থলে, ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে, এই রাজবাড়ী অবস্থিত। ১৯৫২ সাল থেকে শশী লজ ব্যবহৃত হচ্ছে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশী লজটি অধিগ্রহণ করে।
মুক্তাগাছা জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর তৃতীয় উত্তরপুরুষ রঘুনন্দন আচার্য চৌধুরী নিঃসন্তান ছিলেন। অথচ পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, সম্পত্তি সংরক্ষণে সক্ষম একটি পুত্রসন্তান ভীষণভাবে প্রয়োজন। তাই দত্তক পুত্র গ্রহণের সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন তিনি। গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীকে দত্তক নিলেন রঘুনন্দন। মৃত্যুর আগে দত্তক পুত্রের হাতে জমিদারির ভার অর্পণ করেন।জমিদার গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীর প্রতিও সদয় ছিল না নিয়তি। সন্তানহীন অবস্থায় অকালপ্রয়াণ ঘটল তাঁরও। জমিদার গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীর দুই উত্তরসূরীর পর আরেক দত্তক সন্তান নিল লক্ষীদেবী।দত্তক পুত্রের পূর্বনাম পূর্ণচন্দ্র মজুমদার । কুলগুরুর সামনে মহাসমারোহে লক্ষ্মী দেবী নতুন নাম রাখলেন পুত্রের—সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী জনপদে যুক্ত হলো সোনালি মাত্রা। প্রায় ৪১ বছর জমিদারি পরিচালনার প্রশস্ত প্রেক্ষাপটে বহু জনহিতকর কাজ করলেন তিনি। ময়মনসিংহে স্থাপন করলেন একাধিক নান্দনিক স্থাপনা। ঊনবিংশ শতকের শেষপাদে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে নয় একর ভূমির ওপর একটি অসাধারণ দ্বিতল ভবন নির্মাণ
করলেন সূর্যকান্ত। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখা হলো শশী লজ। বিখ্যাত এই ভবনটি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হলে অত্যন্ত ব্যথিত হন সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশী লজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী জনপদে যুক্ত হলো সোনালি মাত্রা। প্রায় ৪১ বছর জমিদারি পরিচালনার প্রশস্ত প্রেক্ষাপটে বহু জনহিতকর কাজ করলেন তিনি। ময়মনসিংহে স্থাপন করলেন একাধিক নান্দনিক স্থাপনা। ঊনবিংশ শতকের শেষপাদে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে নয় একর ভূমির ওপর একটি অসাধারণ দ্বিতল ভবন নির্মাণ করলেন সূর্যকান্ত। নিঃসন্তান সূর্যকান্তের দত্তক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখা হলো শশী লজ। বিখ্যাত এই ভবনটি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হলে অত্যন্ত ব্যথিত হন সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশী লজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। নবীন জমিদারের প্রাণান্ত প্রয়াসে শশী লজ হয়ে ওঠে অনিন্দ্যসুন্দর, অপরূপ।
শশীলজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি গম্বুজ। ভেতরে প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে ছাদ থেকে ঝুলন্ত, প্রায় একই রকম দেখতে বেশ কয়েকটি ঝাড়বাতি। সাধারণ বাসভবন ছাড়াও বাড়িটিতে আছে নাচঘর, স্নানঘর। স্নানঘরে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। ধারণা করা হয় এই সুড়ঙ্গপথে মুক্তাগাছা যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। মূল ভবনের পেছনভাগেও রয়েছে একটি স্নানঘর। পিছনের স্নানঘরটি দোতলা। এই স্নানঘরে বসে রানী পাশের পুকুরে হাঁসের খেলা দেখতেন। পুকুরটির ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। শশীলজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে বাগান। সেই বাগানের মাঝখানে আছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে গ্রিক দেবী ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরতা মর্মর মূর্তি। বাগানের ঠিক পেছনেই লালচে ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশী লজ। শশী লজের অন্দরে বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গালয়। সুদৃশ্য সেই রঙ্গালয়ের এক প্রান্তে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই বর্ণিল মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি জলফোয়ারা। জলফোয়ারার ঠিক ওপরের ছাদ থেকে নিচে ঝোলানো স্ফটিকস্বচ্ছ কাচের ঝাড়বাতি। ভবনটির পেছনে একচিলতে উঠান। সবুজ ঘাসের আঁচল পাতা সেই উঠান পেরোলে একটি অপরিসর জলাশয়। জলাশয়ের পূর্ব ও পশ্চিম পারে দুটি জরাজীর্ণ ঘাট থাকলেও দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বিতল স্নানঘাটটির সৌন্দর্য সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ। এই শশীলজেই ধারণ করা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদ এর অয়ময় নাটকটি ।
কিভাবে যাবেন
বাস সার্ভিস : ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড হতে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে অনেক বাস ছাড়ে। তার মধ্যে এনা পরিবহন এর সার্ভিস সব থেকে ভালো। ১০ মিনিট পর পর বাস ছেড়ে আসে। ভাড়া ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকা মধ্যে। ময়মনসিংহ নেমে রিকসা অথবা ব্যাটারী চালিত অটো দিয়ে সরাসরি চলে যাওয়া যায় শশীলজ।
ট্রেন সার্ভিস : কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ময়মনসিংহে আসার জন্য ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে । তাছাড়া লোকাল ট্রেন আছে কিছু। ভাড়্রা ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকার মধ্যে ।
শহরে থাকার ব্যবস্থা ও যাতায়াত : ময়মনসিংহ একটি বিভাগীয় শহর । এই শহরে থাকার মত খুব ভালো ব্যবস্থা আছে। হোটেল আমীর ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হেরা, হোটেল মোস্তাফিজুর ও সিলভার ক্যাসেল অন্যতম। সিলভার ক্যাসেল হোটেলটি শহর থেকে একটু বাইরে। সিলভার ক্যাসেলের মনোরম পরিবেশ যে কোন মানুষকে আকর্ষন করে । এই হোটেল গুলোর ভাড়া ৮০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাছারা অনেক সস্তা হোটেল আছে যেগুলো তে ১০০-২০০ টাকার মধ্যে থাকা যায়। ময়মনসিংহ শহরে যানজটের পরিমানটা একটু বেশী। রিকসা, অটো রিকসা, সিএনজি, প্রাইভেট কার ও মাইক্রো খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। শহরের মধ্যে যাতায়াতের জন্য রিকসা হলে ভালো হয় ।
0 Comments